Logo
×

রাজনীতি

বছরের শুরুতে ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক হয় জামায়াত আমিরের

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৫৭

বছরের শুরুতে ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক হয় জামায়াত আমিরের

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মানে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ‘ঐক্য সরকার’ গঠনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে চলতি বছরের শুরুতে একজন ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামায়াত আমির বলেন, নির্বাচনের পর স্থিতিশীল সরকার গঠনের স্বার্থে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে তার দল।

রয়টার্সের জরিপ ও মতামত বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় জামায়াতে ইসলামী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জরিপগুলোয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) প্রথমে রেখেছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে ক্ষমতাধর হিসেবে জামায়াত বিএনপির পরে, অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শরিক হিসেবে ক্ষমতায় ছিল জামায়াত। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র দেখতে চাই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি একসঙ্গে আসে, তাহলে আমরা একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করব।

নির্বাচনে জয় পেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, যে দল সর্বাধিক আসন পাবে, সেই দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী হবেন। জামায়াত সর্বাধিক আসন পেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সে বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জামায়াতে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী শাসনব্যবস্থার পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দলটি তাদের রাজনৈতিক পরিসর সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। জামায়াত আমির বলেন, যেকোনো ঐক্য সরকারের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান হতে হবে যৌথ এজেন্ডা। রয়টার্স বলছে, সম্প্রতি একটি ‘জেন-জি’ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসে জামায়াত। এখানে জেন-জি বলতে সংবাদমাধ্যমটি জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বুঝিয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পরপরই ব্যাপক সক্রিয় হয়ে মাঠে নামে জামায়াত। দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপির সঙ্গে দলটির দূরত্ব তৈরি হয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা নির্বাচনে থাকতে পারবে না। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের একাধিক নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল দলটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এ অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক দলীয় গঠনতন্ত্রের কারণে আদালতের রায়ে জামায়াতের নির্বাচন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়। পরে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে দলটির ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কিছুটা বৈরিতা দেখা যাচ্ছে। এটিকে উদ্বেগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জামায়াতের আমির। ডা. শফিকুর রহমানের মতে, হাসিনার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। তিনি বলেন, নতুন সরকার গঠনের সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অংশ হিসেবে চলতি বছরের শুরুতে একজন ভারতীয় কূটনীতিক তার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে অন্য দেশের কূটনীতিকদের মতো প্রকাশ্যে নয়, ওই ভারতীয় কূটনীতিক বৈঠকটি গোপন রাখার অনুরোধ জানান। যদিও ড. শফিক বলেন, আমাদের সবার সঙ্গে এবং নিজেদের মধ্যেও খোলামেলা হতে হবে। সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য না করলেও ভারত সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। কোনো এক দেশের দিকে ঝুঁকে পড়ার আগ্রহ আমাদের নেই। জামায়াত আমির আরও বলেন, জামায়াত অন্তর্ভুক্ত কোনো সরকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে স্বস্তিতে থাকবে না। এদিকে, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন সম্প্রতি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে মেয়াদের মাঝপথেই পদত্যাগ করতে তিনি প্রস্তুত। তবে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টিকে আমি আর জটিল করতে চাই না।