Logo
×

রাজনীতি

ভোটের দিনই গণভোট আগে-পরে কিছু নয়: মির্জা ফখরুল

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৮

ভোটের দিনই গণভোট আগে-পরে কিছু নয়: মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে, এর আগে-পরে কিছু নয় মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৭ অক্টোবর সংস্কার বিষয়ে আমরা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সই করেছি। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেসব বিষয় সামনে রেখেই আমাদের পথ চলতে হবে। এখন নতুন নতুন প্রস্তাব আনছেন, যেগুলোতে মতানৈক্য রয়েছে, সেসব বিষয় জাতীয় সংসদে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে সমাধান হবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সাবেক মন্ত্রী ও গণমানুষের নেতা, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট চান।

মির্জা ফখরুল উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা হয়েছে-যেসব বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে তা নিরসনের জন্য সাত দিনের সময় দেওয়া হলো। এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কি আপনাদের হাতের খেলনা মনে হয়? ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে ঐকমত্য কমিশন করে শুধু মিটিং আর খাওয়া-দাওয়াই করলেন। আমরা প্রত্যেক সময় মতামত দিয়েছি, আবার এখন কেন। আপনারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে গেছেন।

তিনি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, অনেক ছাত্র, নারী, শ্রমিক, রাজনীতিক, শিশুর রক্তে আমাদের এই নতুন বাংলাদেশের সূচনা। অনেক লড়াই-সংগ্রামের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন পানি ঘোলা করে দেশকে ফের অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করবেন না। দেশের মানুষকে আর অশান্তির পথে নেবেন না। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের যে উদ্দেশ্য, দেশের সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে না।

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল অযথা অন্যায় ও অপ্রয়োজনীয় ইস্যু তৈরি করে নির্বাচনের আগে গোলযোগ করার চেষ্টা করছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের পর দেশে একটি পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের সুযোগ এসেছে। এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত জনগণ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, বিএনপি কোনো ভেসে আসা দল নয়। জনগণের গড়া একটি রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার ঘোষকের দল। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার দল। সুতরাং কোনো চোখ রাঙানিতে আমরা পিছপা হবো না।

জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে স্মরণসভাটি মূলত একটি নির্বাচনি মহাসমাবেশে রূপ নেয়। যশোরের বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলা থেকে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা গাছ থেকে কেটে আনা ধানের শীষসহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিলসহকারে সভাস্থলে আসতে থাকেন। বিকাল চারটা নাগাদ টাউন হল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিশাল ওই সমাবেশকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে বলেন, আজ আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেই মহান নেতাকে স্মরণ করছি। তার অভাব অনুভব করছি। ভারাক্রান্ত এই কারণে যে, তিনি দেখে যেতে পারেননি, দেশ আজ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনামুক্ত হয়েছে।

দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করার প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল আবেগতাড়িতকণ্ঠে বলেন, তরিকুল ইসলাম ছিলেন জনগণের প্রকৃত বন্ধু। জাতি একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিককে হারিয়েছে। তিনি মরহুম তরিকুল ইসলামের শিক্ষা, রাজনৈতিক জীবন, কারাবন্দি হওয়া, জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার গুণাবলি নিয়ে একটি বই লেখার অনুরোধ করে বলেন, তরিকুল ইসলাম নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা গিয়েছে তার ওপর দিয়ে, কিন্তু নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসে ছিলেন অটল, কখনো আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। আগামী প্রজন্মের উচিত, তাকে পাঠ করা। তিনি বলেন, সবাই নেতা হতে পারেন না। সেই নেতা হন, যাকে মানুষ চিরকাল মনে রাখে। তার মৃত্যুতে কাঁদে, তাকে অনুভব করে। তরিকুল ইসলাম ছিলেন তেমনই একজন। দলের ক্রান্তিকালে ক্ষণজন্মা এই মানুষটিকে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রায়ই ডাকতেন, তার পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। তিনি আমাদের হৃদয়ে জ্বলজ্বল করছেন। স্মরণসভায় উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি সবাইকে মরহুম তরিকুল ইসলামের জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে দেশ গড়ার কাজে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং ধানের শীষে ভোট দিতে আহ্বান জানান।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক, যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক, যশোর-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, যশোর -২ আসনে দলীয় প্রার্থী সাবিরা সুলতানা মুন্নী বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি যশোর-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, জেলা কমিটির সাবেক নেতা অ্যাড. মুহম্মদ ইসহক, অ্যাড. নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক নার্গিস বেগম, তরিকুলপুত্র বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনকি সম্পাদক ও যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।