বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে বলে আত্মবিশ্বাসী তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৪৬

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে- এ বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
প্রায় সতেরো বছর ধরে লন্ডনে পরিবারসহ বসবাসরত তারেক রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি দেশে ফিরবেন। তার ভাষায়, আমি মনে করি, আমার বাংলাদেশে ফেরার সময় খুব সন্নিকটে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটানো ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থান সম্পূর্ণ হবে না। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, আমরা জয়ী হবো। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থায় আমরা রয়েছি।
ফিন্যানশিয়াল টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশে পরবর্তী সরকারকে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি সামলাতে হবে। তৈরি পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের মুখে পড়েছে এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া তারা উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গেছেন।
জনমত জরিপে বিএনপি এগিয়ে থাকায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শেখ হাসিনার দলটিকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়ে ইউনূসের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত। এদের মধ্যে রয়েছে গত বছরের ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া একটি নতুন দলও। তারেক রহমান বলেন, আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব। তারা তরুণ, তাদের একটি ভবিষ্যৎ আছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার নতুন দিকও তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে আমাজন, ইবে ও আলিবাবার মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘সরবরাহ কেন্দ্র’ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা, যাতে তৈরি পোশাকের বাইরেও অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করা যায়।
ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, সব কিছুর আগে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে তিনি ‘একপক্ষীয়’ হিসেবে বর্ণনা করে নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
ফিন্যানশিয়াল টাইমস উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের তিক্ত সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭৫ সালে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন। অপরদিকে, তারেক রহমানের বাবা জিয়াউর রহমানও স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন, যিনি ১৯৮১ সালে নিহত হন। এরপর তার মা খালেদা জিয়া কয়েক দশক ধরে বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন।
৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে নির্বাসনে রয়েছেন। একাধিক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হলেও তিনি সেগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নতুন বিএনপি সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, গত আগস্ট থেকে সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে দেওয়া হবে কি না—এ প্রশ্নে মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন তারেক রহমান। ফিন্যানশিয়াল টাইমস বলেছে, এখনো আওয়ামী লীগের একটি উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন রয়েছে। সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, যদি তারা অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে?
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধীদের দমন, দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটেছে।
তারেক রহমান জানিয়েছেন, বিএনপি সরকার গঠনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন যে শত শত কোটি ডলার ফেরত আনতে কাজ করছে, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা এই অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে ইউনূস প্রশাসনের অভিযোগ।
তবে ফিন্যানশিয়াল টাইমস স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, বিএনপি সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে বাংলাদেশ টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।