
মানবিক সামগ্রী নিয়ে গাজার অবরোধ ভাঙার শপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ফিলিস্তিনের ‘মৃত্যু উপত্যকার’ দিকে ছুটছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযান, যেটিতে রয়েছেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
গাজায় গণহত্যা উন্মুখ ইসরায়েলের হানাদার বাহিনী বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকালের মধ্যে সুমুদ ফ্লোটিলার বেশিরভাগ নৌযান তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে সেসব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের, যাদের মধ্যে সুপরিচিত একজন হলেন জলবায়ুকর্মী গ্রেটা টুনবার্গ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে আসছে, ফ্লোটিলার নৌযানগুলো আটক করতে তাদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে অনেকে জানতে চাইছেন এই ফ্লোটিয়া অংশ নেওয়া বাংলাদেশের একমাত্র অধিকারকর্মী শহিদুল আলমের খবর।
দুই দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তার পোস্টগুলো মুহূর্তেই ভাইরাল হচ্ছে; সেই সঙ্গে হাজারো মানুষের আবেগঘন মন্তব্য পড়ছে, সবাই জানতে চাইছেন তিনি কেমন আছেন।
ফেসবুক বন্ধু ও পরিচিতদের বাইরে শহিদুল আলম এই দুই দিনে অসংখ্যা বাংলাদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, সেটি বুঝতে পেরে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছন তিনি। মাতৃভূমির মানুষের উদ্বেগকে সম্মান জানিয়ে বার্তাও পাঠিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫ মিনিটের দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের শারীরিক অবস্থা এবং ফ্লোটিলার পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য দেন শহিদুল আলম। পোস্টে তিনি লিখেছেন, “অনেকে জানতে চাইছেন আমি কেমন আছি। দুঃখিত, আপনাদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে উত্তর দিতে পারছি না। আজকে আমি বমি করেছি এবং পরে পড়েও গিয়েছিলাম, তবে তেমন গুরুতর কিছু নয়। জাহাজে ২০ জন চিকিৎসক ও নার্স থাকার কারণে চিকিৎসার দিক থেকে আমরা সম্ভবত অন্য যেকোনো জাহাজের যাত্রীদের চেয়ে সবচেয়ে ভালো যত্ন পাচ্ছি। আমি যে এত মনোযোগ পেয়েছি, তা ভীষণ উপভোগ করেছি। আমার ভাগ্নি মৌলি হলে হয়তো বলত, সব কিছুতেই আমার বাড়াবাড়ি। অবশ্য গাজা থেকে আরেকটি দিনের দূরত্বে আছি।”
আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ৪৬টি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৪৯৮ জন অধিকারকর্মী ৪৪টি নৌকা নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার পথে যাত্রা শুরু করে। গাজায় গণহত্যা নিয়ে নীবরতা ভেঙে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে আসতে চাপ দিতে থাকে বিভিন্ন দেশ, যার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমের উন্নত দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়; আরো অনেক দেশ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে। তবে রাজনীতি-কূটনীতির জটিল প্যাঁচ পাশ কাটিয়ে বিশ্বের অধিকারকর্মীদের একটি গ্রুপ গাজায় ইসরায়েলের নজিরবিহীন অবরোধ ভাঙার অঙ্গীকার করে নৌযানের বহর নিয়ে গাজার দিকে যাত্রা করে দুদিন আগে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নৌযানগুলোর অবস্থান গাজার উপকূল বা তার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। তবে আন্তর্জাতিক জলসীমাতেই সেগুলোর বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী, যারা অন্তত ৩৫০ জন অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর রয়েছে। আলজাজিরার জানায়, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে তারা একটি বাদে সব নৌযান জব্দ করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শহিদুল আলমদের নৌযানটি যেহেতু এখনো যাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং সেই নৌযানের অবস্থা সম্পর্কে মাঝে মাঝে তথ্য দিচ্ছেন তিনি, সেহেতু আটক না হওয়া নৌযানটিতেই রয়েছেন তারা।