"বিগত সময়ের মতো মেরুদণ্ডহীন মানবাধিকার কমিশন চাই না"

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১০

বিগত সময়ে নখদন্তহীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উপহার দেওয়া হয়েছে। আমরা ওইরূপ নখদন্তহীন ও মেরুদণ্ডহীন মানবাধিকার কমিশন চাই না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে মানবাধিকার কমিশন গঠনে ড. ফখরুউদ্দিনের সরকারের সময় আইনের খসড়া তৈরি হয়। ওই আইনের ভিত্তিতে পরবর্তী সরকারের সময় কমিশন গঠিত হয়। নতুন সরকার আইনটি অনুমোদন দেন। ওই আইনের অধীনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নিয়োগ হয়। এরপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধিক চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর কমিশন বাতিল করা হয়। এরপর প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নেই। অথচ সরকার এ সময়ে অন্যান্য কমিশন গঠন করেছেন।
তিনি বলেন, এই সময়ে কমিশন গঠিত না হলেও সরকার মানবাধিকার বিষয়ে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছেন। সেই আইনের খসড়া নিয়ে আজকের আলোচনা। বিগত সময়ে কমিশনের ইতিহাস বিবেচনায় নিলে প্রশ্ন থেকে যায়—দেশের মানবাধিকারের কি কোনো উন্নতি হয়েছে? অন্যদিকে নতুন খসড়া আইনে নতুনত্ব কী আছে, যার ফলে পিছিয়ে পড়া মানুষের মানবাধিকারের বিষয়টি বাস্তবায়ন হবে? আমার উপলব্ধি হলো, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নামে বিগত সময়ে নখদন্তহীন মানবাধিকার কমিশন উপহার দেওয়া হয়েছে। যে কোনো কামড় দিতে পারে না, যার কোনো দক্ষতা নেই কিংবা কার্যক্ষমতা নেই এ রকম মানবাধিকার কমিশন আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমার প্রথম চাওয়া হলো, আমরা এরূপ নখদন্তহীন মানবাধিকার কমিশন চাই না। যারা কার্যকরভাবে মানবাধিকার রক্ষা করতে পারবে সেইরকম কমিশন চাই।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আরেকটি হলো নখদন্তহীন মানবাধিকার কমিশনের মাথায় একজন মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষকে বসিয়ে দেবেন না। সেই মানুষ কোনো দিন অন্য মানুষের জন্য মেরুদণ্ড শক্ত করে কাজ করতে পারবে না। এজন্য মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষের প্রয়োজন নেই। আমাদের সৎ, নীতিবান ও সাহস করে সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে পারে, সেই মানুষ প্রয়োজন। সেই রকম মানুষ যাতে কমিশনে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া খসড়া আইন নিয়ে আলোচনায় বলেন, বিগত সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে মানুবাধিকার ইস্যু কাজ করেনি। অন্যান্য ক্ষেত্রে সফল হয়। কেন হয় না, সেটা বিবেচনা করা উচিত। খসড়া আইনেও বিষয়টি উপেক্ষিত মনে হয়েছে। নতুন আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্বৈত নাগরিক কমিশনে নিয়োগে বাধা নেই। এটা কেন করা হয়েছে জানি না। তবে থাকা উচিত ছিল। কোনো আমলাকে এখানে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, কিন্তু এখানে সেই সুযোগ রয়েছে, যা প্যারিস চুক্তির সুস্পষ্ট লংঘন।
‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ এর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান দুটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রেক্ষাপটে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) ম্যান্ডেট ও কার্যপরিধি, গঠন এবং স্বাধীনতাভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতার বিশ্লেষণ।